প্রত্যয় নিউজডেস্ক: বাংলাদেশে আবারও কথিত ইসলামিক স্টেটের একজন নতুন আমিরকে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে সম্প্রতি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের জি নিউজের একজন সাংবাদিক এক টুইট বার্তায় এই খবরটি দিয়েছেন।
পুজা মেহতা জি নিউজের সন্ত্রাসবাদ এবং অপরাধ বিষয়ের ওপর কাজ করছেন। তিনি দাবি করছেন, ইসলামিক স্টেট বা আইএস-পন্থি একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে বাংলাদেশে সংগঠনটির নতুন আমীর নিয়োগের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের নতুন আরিরের নাম আবুল আব্বাস আল বাঙ্গালি। কিন্তু আন্তর্জাতিক জিহাদি সংগঠনগুলোর তৎপরতার খোঁজ-খবর রাখেন এমন বিশেষজ্ঞরা এই দাবির ব্যাপারে গুরুতর সংশয় প্রকাশ করছেন।
সুইডেনে অবস্থানরত বাংলাদেশি লেখক এবং সাংবাদিক তাসনীম খলিল বলছেন, এ নিয়ে গত কয়েক বছরে এমন তিন জনের নাম শোনা গেল, যাদেরকে বাংলাদেশে আইএসের নতুন প্রধান বলে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এসব দাবির কোনটিরই সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আইএস নিজেই বিবৃতি দিয়ে এই দাবির প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তাসনীম খলিল বলছেন, ভারতীয় সাংবাদিক পুজা মেহতার টুইটে যে দাবি করা হয়েছে, তা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, আইএসের অফিশিয়াল কিছু টেলিগ্রাম চ্যানেল আগে ছিল। সংগঠনটির মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট যারা চালাতো, তারা এগুলো পরিচালনা করতো।
তার মতে, বাংলাদেশের ব্যাপারে খবর দেয়ার যে অফিশিয়াল চ্যানেলগুলো আইএসের ছিল, সেগুলো এখন আর নেই। কাজেই এই টুইটে প্রো-আইসিস বাংলাদেশ টেলিগ্রাম চ্যানেলের বরাতে যা বলা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।
আর আইসিসের এখনো যে কয়েকটি চ্যানেল আছে, সেগুলোতে এখনো পর্যন্ত এ ধরণের কোন খবর প্রকাশ করা হয়নি যে, তারা নতুন কোন আমিরকে বাংলাদেশে নিয়োগ করেছে।
তাসনিম খলিলের মতে, বাংলাদেশে আইএসের সাংগঠনিক অবস্থান এখন নেই বললেই চলে। কাজেই যে সংগঠনই নেই, সেই সংগঠনের আমির নিযুক্ত করার বিষয়টি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আইএসের আমির নিযুক্ত করারও কয়েকটা প্রক্রিয়া আছে। যে কেউ হঠাৎ করে টুইটারে বলে দিলেই কিন্তু নতুন আমির নিযুক্ত হয়ে যায় না। এজন্য সবকিছু মিলিয়ে তার মতে এই দাবি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়, হাস্যকরও বটে।
তিনি বলছেন, যেহেতু আইএসের নিজস্ব যোগাযোগের চ্যানেলগুলোও এখন নেই তাই এরকম কোন দাবির সত্যতা যাচাই করার সুযোগও নেই। তাসনিম খলিল বাংলাদেশে আইএসের কথিত নতুন আমিরের ছদ্মনাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, পুজা মেহতার এই টুইটে বেশ কিছু ভুল আছে। এতে নতুন আইএস আমিরের নাম আবুল আব্বাস আল বাঙ্গালি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আইএস সাধারণত তাদের নেতা বা যোদ্ধাদের যে নাম প্রকাশ্যে প্রচার করে, সেটি আসলে ছদ্মনাম বা তাদের ভাষায় কুনিয়া। আইএসের কুনিয়া সাধারণত এরকম হয় না।
এই কুনিয়ার দুটি অংশ থাকে। একটি অংশে মূলত পারিবারিক সম্পর্কের ইঙ্গিত থাকে, আরেকটিতে থাকে তিনি কোন দেশ বা কোন অঞ্চলের মানুষ সেটির ইঙ্গিত।
তাসনিম খলিল বলেন, আবুল আব্বাস আল বাঙালি যদি আইএসের দেয়া নাম হতো তাহলে এটি আসলে হতো আবু আব্বাস আল বাঙ্গালি। আবু আব্বাস মানে আব্বাসের পিতা আর আল-বাঙ্গালি মানে বাংলাদেশি বা বাংলাদেশের মানুষ।
বাংলাদেশে আইএসের প্রথম ঘোষিত আমির ছিলেন সাইফুল্লাহ ওজাকি, যার কুনিয়া বা ছদ্মনাম ছিল আবু ইব্রাহীম আল হানিফ। সাইফুল্লাহ ওজাকির একটি ছোট ছেলে ছিল যার নাম ছিল ইব্রাহীম। তার ভিত্তিতেই এই কুনিয়া।
বাংলাদেশে আইএসের এখনো পর্যন্ত স্বীকৃত আমির একজনই ছিল, তার নাম ছিল আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তার প্রকৃত নাম ছিল সাজিথ দেবনাথ। ধর্মান্তরিত হয়ে জাপানে অবস্থানকালে তার নতুন নাম হয় সাইফুল্লাহ ওজাকি। তাকেই বাংলাদেশের গুলশানে হোলি আর্টিজানে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে মনে করা হয়। ২০১৯ এর মে মাসে খবর আসে যে ইরাকে কুর্দি বাহিনীর হাতে সাইফুল্লাহ ওজাকি ধরা পড়েছেন।
তাসনীম খলিল জানান, ওজাকির পর বাংলাদেশে আরও দুজন আইসিসের আমির হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিল। এদের একজনের নাম বলা হয়েছিল আবু শফিক আল বাঙ্গালি (২০১৭) । অপরজনের নাম আবু মুহাম্মদ আল বাঙ্গালি। কিন্তু পরে এই দুটি দাবিরই কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বাকিয়া মিডিয়া স্ট্রাইক নামে বাংলাদেশে আইসিসের যে কমিউনিকেশন চ্যানেল ছিল তারা নিজেরাই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, এগুলো আইএসের শত্রু এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাজ করা গুপ্তচরদের প্রচারণা।
আইসিসের নতুন আমির নিয়োগের এরকম দাবি যদি ভুয়া হয়ে থাকে সেই প্রচারণার উদ্দেশ্য কী হতে পারে? তাসনিম খলিল বলেন, বিভিন্ন দেশে যেসব নিরাপত্তা বাহিনী বা গুপ্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম কাজে যুক্ত তারা নিজেরাই অনেক সময় ছদ্ম প্রচারণা চালিয়ে সম্ভাব্য জঙ্গিদের ফাঁদে আটকানোর চেষ্টা করে।
এ ধরণের তৎপরতাকে বলা হয় হানিপট অপারেশন অর্থাৎ মধুর লোভ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা। বিভিন্ন নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাইবার সেলগুলো এরকম তৎপরতা চালিয়ে থাকে। এটা সেরকম কোন অপারেশনের অংশ হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা সম্পর্কে যে অনেক মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয় তার একটি সাম্প্রতিক উদাহারণ তুলে ধরেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশে খবর বেরিয়েছিল যে, ঢাকার একটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় যুক্ত থাকার দাবি করেছে আইএস। সাইট ইন্টেলিজেন্স থেকে অনেকেই এই খবরটি প্রচার করলো। অথচ ওই বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে যে আইসিসের কোন সম্পর্ক ছিল না, সেটা বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম পুলিশের তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।